ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড দখল করার ঘোষণা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা দখল করবে এবং সেখানকার মালিক হবে।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই ঘোষণা দেন। প্রয়োজনে গাজা উপত্যকায় মার্কিন সেনা পাঠানোর কথাও বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট।
বুধবার সকালে বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো ফলাও করে এই খবর প্রকাশ করেছে।
তুর্কি বার্তাসংস্থা আনাদোলু বলছে, গাজার বাইরে ফিলিস্তিনিদের স্থায়ী পুনর্বাসনের ইঙ্গিত দেওয়ার পরপরই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা দখল করবে।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা দখল করবে এবং আমরা এটি নিয়ে কাজও করব।
ট্রাম্প বলেন, আমরা গাজার মালিক হব এবং সেখানকার সব বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা এবং অন্য অস্ত্র নির্মূল করব, ভূখণ্ডটি সমতল করব এবং ধ্বংস হওয়া ভবনগুলো থেকেও আমরা মুক্তি পাবো, এগুলোকে সমতল করব (এবং) সেখানে এমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন করব যা ওই এলাকার মানুষের জন্য প্রচুর চাকরি এবং আবাসন সৃষ্টি করবে।
যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকায় সেনা পাঠাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জবাব দেন, যদি প্রয়োজন হয়, আমরা তা করব।
তিনি বলেন, আমরা সেই অংশটি দখল করতে যাচ্ছি। আমরা এটির উন্নয়ন করতে যাচ্ছি, হাজার হাজার কর্মসংস্থান তৈরি করতে যাচ্ছি, এবং এটি এমন কিছু হবে যা সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য খুব গর্বিত হতে পারে।
ট্রাম্প আরও বলেছেন, তিনি গাজা উপত্যকায় “দীর্ঘমেয়াদী মালিক” হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে দেখেন। মার্কিন রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি অনেক মাস ধরে এটি খুব ঘনিষ্ঠভাবে অধ্যয়ন করেছি এবং আমি একে প্রতিটি ভিন্ন কোণ থেকে ভেবে দেখেছি। এটি খুব, খুব বিপজ্জনক জায়গা এবং এটি কেবল আরও খারাপ হতে চলেছে।
আমি মনে করি, এই ধারণাটি অসাধারণ হয়েছে এবং আমি নেতৃত্বের সর্বোচ্চ স্তর থেকেই এই কথা বলছি এবং যদি যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে স্থিতিশীলতা ও শান্তি আনতে সাহায্য করতে পারে, আমরা তা করব।
এর অর্থ তিনি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানকে সমর্থন করেন না কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, এর অর্থ দুই-রাষ্ট্র বা এক-রাষ্ট্র বা অন্য কোনো রাষ্ট্র সম্পর্কে কিছু নয়। এর মানে হল আমরা চাই।
ফিলিস্তিনিরা চলে গেলে গাজায় কারা বাস করবে এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প জবাব দেন, বিশ্বের মানুষ। আমি মনে করি আপনি এটিকে একটি আন্তর্জাতিক, অবিশ্বাস্য জায়গায় পরিণত করবেন। আমি মনে করি গাজা স্ট্রিপের সম্ভাবনা অবিশ্বাস্য।
আমি মনে করি সমগ্র বিশ্ব, সারা বিশ্বের প্রতিনিধিরা সেখানে থাকবেন এবং তারা সেখানে বাস করবেন….ফিলিস্তিনিরা সেখানে বাস করবে। অনেক মানুষ সেখানে বাস করবে।
ট্রাম্প আরও বলেন, গাজা উপত্যকা ‘রিভেরা অব দ্য মিডল ইস্ট’ হয়ে উঠবে। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে এমন কিছু করার সুযোগ রয়েছে যা অসাধারণ হতে পারে।
অন্যদিকে নেতানিয়াহু বলেছেন, আমরা যেমনটা আলোচনা করেছি, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে এবং আমাদের অঞ্চলে শান্তি আনতে, আমাদের কাজ শেষ করতে হবে। ইসরায়েলকে নিশ্চিত করতে হবে যে, গাজা আর কখনও ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি ভবিষ্যতে কোনো সময়ে গাজা সফরে যেতে চান কি না।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, “আমি ইসরাইলকে ভালোবাসি। আমি সেখানে যাব এবং আমি গাজা পরিদর্শন করব, আমি সৌদি আরব সফর করব, আমি সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্থান পরিদর্শন করব। মধ্যপ্রাচ্য একটি অবিশ্বাস্য জায়গা, এত প্রাণবন্ত — মহান ব্যক্তিদের এই অঞ্চল সত্যিই সুন্দর জায়গাগুলির মধ্যে একটি।
মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ গত সপ্তাহে গাজা উপত্যকায় ১৫ বছরের মধ্যে প্রথম আমেরিকান কর্মকর্তা নিযুক্ত হয়েছিলেন। উইটকফ, একজন রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার, নিউজ ওয়েবসাইট অ্যাক্সিওসকে বলেছেন, যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ অপসারণ করতে প্রায় পাঁচ বছর এবং পুনর্নির্মাণ করতে ১০-১৫ বছর সময় লাগবে। ধারণা করা হচ্ছে তিনি গাজায় আবাসন গড়তে কাজ পাবেন।
এদিকে ট্রাম্পের গাজা দখলের ঘোষণার নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘসহ আরব দেশগুলো। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারাও এর নিন্দা জানিয়েছেন।
ট্রাম্পের ঘোষণাকে ‘অসুস্থ রসিকতা’ আখ্যা দিয়ে ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছেন, “আমরা গাজা দখল করছি না।”
মার্কিন কংগ্রেসওম্যান রাশিদা তালাইব তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছেন, ‘এই রাষ্ট্রপতি প্রকাশ্যে একটি গণহত্যাকারী যুদ্ধাপরাধীর পাশে বসে জাতিগত নির্মূলের আহ্বান জানাচ্ছেন।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, গাজার জনসংখ্যা স্থানান্তর এবং ফিলিস্তিনি ছিটমহল গড়ে তোলার ট্রাম্পের পরিকল্পনা ‘জাতিগত নির্মূল’ এর নামান্তর।
তিনি বলেন, ট্রাম্পের পরিকল্পনা চিরকালের জন্য একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে অসম্ভব করে তুলবে।