Dhaka 5:59 pm, Wednesday, 5 February 2025

গাজা ছাড়বে না ফিলিস্তিনিরা, ট্রাম্পের প্রস্তাবের নিন্দা জাতিসংঘ দূতের

গাজার জনগণকে স্থায়ীভাবে অন্য কোথাও পুনর্বাসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি রিয়াদ মানসুর। জবাবে তিনি বলেছেন, বিশ্ব নেতাদের ফিলিস্তিনিদের গাজায় থাকার ইচ্ছাকে সম্মান করা উচিত।  

 

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আরব নিউজ।

মানসুর বলেন, ‘আমাদের মাতৃভূমি আমাদের।  যদি এর একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যায়, যেমন গাজা, এরপরও ফিলিস্তিনি জনগণ সেখানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি মনে করি, নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববাসীর উচিত ফিলিস্তিনি জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান জানানো’।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত, যেখানে ইসরাইলি অভিযানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে।

ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখল করতে চায় এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরিয়ে নিয়ে সেখানে পুনর্গঠন চালাবে।  পরে তা বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

জাতিসংঘে মানসুর সরাসরি ট্রাম্পের নাম নেননি, তবে তার প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ, আমাদের বাড়ি গাজা স্ট্রিপ, এটি ফিলিস্তিনের অংশ, আমাদের আর কোনো বাড়ি নেই। যারা আমাদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের উচিত ইসরাইলের ভেতরে আমাদের নিজেদের আসল বাড়িতে ফিরতে দেওয়া।  সেখানে সুন্দর জায়গা আছে, এবং আমরা খুশি মনে সেসব স্থানে ফিরে যাব।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১,২১০ জন নিহত হন। এর জবাবে ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৪৭ হাজার ৫১৮ জন নিহত হয়েছে, যার বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ, বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘ এই সংখ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।

ইসরাইলের অভিযানে গাজার ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ—প্রায় ১৯ লাখ—বাস্তুহারা হয়েছে। বিমান হামলায় স্কুল, হাসপাতালসহ নাগরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর ধ্বস্তূপ থেকে প্রায় প্রতিদিনই মরদেহ উদ্ধার হচ্ছে। এছাড়া যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর বহু ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করেন, যদিও অনেকের বাড়িঘর আগের অবস্থায় নেই।

জাতিসংঘ দূত মানসুর আরও বলেন, ‘মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৪ লাখ ফিলিস্তিনি হাঁটতে হাঁটতে গাজার উত্তর অংশে ফিরে গেছেন’।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের উচিত ফিলিস্তিনি জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করা। শেষ পর্যন্ত তারাই নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে’।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Popular Post

গাজা ছাড়বে না ফিলিস্তিনিরা, ট্রাম্পের প্রস্তাবের নিন্দা জাতিসংঘ দূতের

Update Time : 05:59:26 am, Wednesday, 5 February 2025

গাজার জনগণকে স্থায়ীভাবে অন্য কোথাও পুনর্বাসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করেছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনের প্রতিনিধি রিয়াদ মানসুর। জবাবে তিনি বলেছেন, বিশ্ব নেতাদের ফিলিস্তিনিদের গাজায় থাকার ইচ্ছাকে সম্মান করা উচিত।  

 

বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে আরব নিউজ।

মানসুর বলেন, ‘আমাদের মাতৃভূমি আমাদের।  যদি এর একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যায়, যেমন গাজা, এরপরও ফিলিস্তিনি জনগণ সেখানে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি মনে করি, নেতৃবৃন্দ ও বিশ্ববাসীর উচিত ফিলিস্তিনি জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান জানানো’।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের সময় ট্রাম্প বলেন, তিনি মনে করেন ফিলিস্তিনিদের গাজা ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত, যেখানে ইসরাইলি অভিযানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে।

ট্রাম্প সংবাদ সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গাজা দখল করতে চায় এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে সরিয়ে নিয়ে সেখানে পুনর্গঠন চালাবে।  পরে তা বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

জাতিসংঘে মানসুর সরাসরি ট্রাম্পের নাম নেননি, তবে তার প্রস্তাব স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশ, আমাদের বাড়ি গাজা স্ট্রিপ, এটি ফিলিস্তিনের অংশ, আমাদের আর কোনো বাড়ি নেই। যারা আমাদের অন্য কোথাও পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের উচিত ইসরাইলের ভেতরে আমাদের নিজেদের আসল বাড়িতে ফিরতে দেওয়া।  সেখানে সুন্দর জায়গা আছে, এবং আমরা খুশি মনে সেসব স্থানে ফিরে যাব।’

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১,২১০ জন নিহত হন। এর জবাবে ইসরাইলের হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় অন্তত ৪৭ হাজার ৫১৮ জন নিহত হয়েছে, যার বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ, বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘ এই সংখ্যাকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।

ইসরাইলের অভিযানে গাজার ৯০ শতাংশেরও বেশি মানুষ—প্রায় ১৯ লাখ—বাস্তুহারা হয়েছে। বিমান হামলায় স্কুল, হাসপাতালসহ নাগরিক অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে গেছে।

গত ১৯ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকরের পর ধ্বস্তূপ থেকে প্রায় প্রতিদিনই মরদেহ উদ্ধার হচ্ছে। এছাড়া যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর বহু ফিলিস্তিনি তাদের বাড়িতে ফেরার চেষ্টা করেন, যদিও অনেকের বাড়িঘর আগের অবস্থায় নেই।

জাতিসংঘ দূত মানসুর আরও বলেন, ‘মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৪ লাখ ফিলিস্তিনি হাঁটতে হাঁটতে গাজার উত্তর অংশে ফিরে গেছেন’।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের উচিত ফিলিস্তিনি জনগণের ইচ্ছাকে সম্মান করা। শেষ পর্যন্ত তারাই নিজেদের ভাগ্য নির্ধারণ করবে’।