তাহিরপুর নির্বাচন অফিসে অফিস গার্ড হাবিবকে টাকা না দিলে মিলছে না জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর নির্বাচন অফিস থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র স্মার্টকার্ড ফ্রিভাবে বিতরণের কথা থাকলেও টাকা ছাড়া স্মার্ট কার্ড দেওয়া হচ্ছে না বলে অনেক ভূক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানান যায়,২০২৪ সালের ডিসেম্বরের শেষদিক থেকে শুরু করে চলতি বছরের জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত যেখানে ফ্রিভাবে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হলেও, বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেকেই সময়মতো উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে ফ্রিভাবে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে পারেননি।
পরবর্তীতে ঐ গ্রামের লোকজন স্থানীয় নির্বাচন অফিসে স্মার্টকার্ড আনতে গেলে স্থানীয় নির্বাচন অফিসে মাষ্টাররোলে কর্মরত অফিস গার্ড মোঃ হাবিব সারোয়ার নামে ঐ লোকটির সাথে পরিচয় হয় স্থানীয় স্মার্টকার্ড নিতে আসা বেশ কয়েকজন ভূক্তভোগী লোকজনের। তখন হাবিব সারোয়ার বিভিন্ন অজুহাতেনির্বাচন অফিসে আসা গ্রামের সহজ সরল জনসাধারনকে এখন কার্ড দেয়া যাবে না পরবর্তীতে দেয়া যাবে,তবে কিছু খরচের টাকা দিলে স্মার্টকার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়া যাবে বলে প্রতিজনের নিকট হতে উৎকোচ(৫০০ টাকা) নিয়ে কার্ড দিচ্ছেন বলে এমন অভিযোগের কথা অনেকেই সংবাদকর্মীদের জানান। এভাবে তিনি স্মার্টকার্ড দেয়ার নামে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে উপজেলার গুটিলা গ্রামের ফুলেছা বেগম বলেন, আমরা স্বপরিবারে সিলেটে থাকি, এখন ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য জন্ম নিবন্ধন করতে হয়। আর সেই জন্ম নিবন্ধনের জন্য স্মার্ট পরিচয় পত্রের দরকার পড়ে সেইজন্য স্মার্টকার্ড পরিচয় পত্র নিতে আসছিলাম তাহিরপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে। তখন নির্বাচন অফিসের অফিস গার্ড হাবিব সারোয়ার নাকি ফুলেছা বেগমকে জানান দুই মাসের ভিতরে স্মার্টকার্ড দেয়া যাবে না। তবে কিছু খরচের টাকা দিলে অবশ্যই পেয়ে যাবেন, পরে বাধ্য হয়ে তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে স্মার্ট কার্ড নিতে হয়েছে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংবাদকর্মী, দৈনিক আলোর সকাল অনলাইন পোর্টালের পরিচালক মোঃ আব্দুল মান্নান জানান, ফুলেছা আমার স্ত্রীর বড়বোন হন। উনার আইডি কার্ডের দরকার পড়ে সেজন্য সিলেট হতে আমার বাড়িতে আসেন তিনি। আমি জরুরী কাজে ঢাকা থাকায়, আমি আমার স্ত্রীকে দিয়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসে যেতে বলি, সেখানে যাওয়ার পরে আমাকে ফোন করে জানানো হয় এ মুহূর্তে তারা স্মার্ট কার্ড দিতে পারবে না। পরে নির্বাচন অফিসের অফিস গার্ড হাবিব সারোয়ার নামে একজনের সাথে আমার কথা হয়। তিনি জানিয়েছেন আগামী দুই মাস পর ছাড়া আইডি কার্ড বিতরণ হচ্ছে না । আমি আমার পরিচয় দিয়ে হাবিব সারোয়ার নামের ঐ ব্যাক্তিকে বলি যদি দেওয়ার কোন নিয়ম তাকে তাহলে আশা করি দিয়ে দেবেন, আর যদি সরকারি কোন নিয়ম না থাকে তাহলে দুই মাস পর যোগাযোগ করবো এই বলে আমি ফোন রেখে দেই। পরবর্তীতে অফিস গার্ড হাবিব সারোয়ার নামে ঐ লোকটি আমার স্ত্রীকে ফোন করে বলেন কিছু খরচের টাকা দিলে আইডি কার্ডটা করে দিয়ে দিব। পরবর্তীতে ৫ শত টাকা ঘোষ দিয়ে আইডি কার্ডটি আনতে হলো বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন ঢাকা থেকে আমি বাড়িতে আসার পর বিষয়টা নিয়ে এলাকাতে খোঁজখবর নেই, পরে জানতে পারলাম উপজেলা থেকে যারা স্মার্ট কার্ড গ্রহণ করছেন অধিকাংশ লোকজনই হাবিব সারোয়ারকে ৫০০ টাকা করে ঘুষ দিয়ে স্মার্ট কার্ড নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করতে হয়েছে।
স্থানীয় তাহিরপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসে মাষ্টাররোলে কর্মরত অভিযুক্ত অফিস গার্ড হাবিব সারোয়ারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে তার মোবাইলে আরেকটি ফোন এসেছে এমন অজুহাতে ফোনের লাইনটি কেটে দেন।
এ ব্যাপারে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম জানান,টাকা দিয়ে স্মার্টকার্ড গ্রহন করেছেন এমন কোন ভূক্তভোগী থাকলে আমার নিকট লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে দোষী প্রমানিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।